শুভ কামনা ‘রেমডেসিভির’ জন্য
চীনের উহান প্রদেশ থেকে গত বছর ডিসেম্বরের শেষ দিকে করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব দেখা দেয়। যা বর্তমানে বৈশ্বিক মহামারি রূপে দেখা দিয়েছে। এরই মধ্যে কোভিড-১৯, ছড়িয়ে পড়েছে এক দেশ থেকে অন্য দেশে।
দ্রুত ছড়িয়ে পড়ায় আতঙ্কিত মানুষ ঘর বন্দী হয়ে পড়ে। লকডাউন শুরু হয়ে যায় দেশে দেশে, অঞ্চলে অঞ্চলে। বন্ধ হয়ে যায় স্কুল, কলেজ, সরকারি-বেসরকারি অফিস, আদালত, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, মসজিদ, মন্দির, উপাসনালয়। সামাজিক দূরত্ব সৃষ্টি হয়ে যায় মানুষে মানুষের। মানুষ রীতিমত হয়ে পড়ে এক ঘরে। শুধু মাত্র কর্ম চঞ্চল থাকে হাসপাতাল গুলো। ডাক্তার, নার্স আর স্বাস্থ্য কর্মীদের আতঙ্কিত পদচারণায়। সাধারণ মানুষের পাশে এসে দাঁড়ায় পুলিশ, সেনাবাহিনী সহ সকল আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। মানুষ মানুষের জন্য, দুশ্চিন্তা গ্রস্ত আর অসহায় মানুষের পাশে এসে স্বাস্থ্য কর্মী ও আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী মানবতার দূত হিসেবে আবির্ভূত হন। নিজের জীবন বাজি রেখে মানুষের সেবায়, আর্ত মানবতার সেবায় নিজেদেরকে সঁপে দিয়েছেন মনে প্রাণে।
মানুষ এতটা অসহায়, আগে হয়তো বুঝতেই পারেনি কখনো। মানুষের শিক্ষা-দীক্ষা, বিজ্ঞানের উৎকর্ষ সাধন, সবকিছু মানুষকে এতটাই অহংকারী করে দিয়েছিল যে, মানুষ ভুলেই গিয়েছিল মানুষ কতটা অসহায়!
দেশে দেশে লাশের মিছিল, ডাক্তার, স্বাস্থ্য কর্মী, পুলিশ, আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারি বাহিনী, শিক্ষাবিদ, সুশীল সমাজ, সাধারণ মানুষ, শিক্ষিত-অশিক্ষিত, ধনী-দরিদ্র, ছোট-বড় কেউ বাদ যায়নি, এই মৃত্যুর মিছিল থেকে। যারা আক্রান্ত হয়েছেন তারা হয়তো খুব কাছ থেকেই দেখেছেন যমদূত কে। ইতিমধ্যেই সারা বিশ্বে লক্ষ লক্ষ মানুষ এই পৃথিবী থেকে চিরবিদায় নিয়েছেন, মহামারীর এই করাল গ্রাসের থাবায়।
সারা বিশ্বের চিকিৎসা বিজ্ঞানীরা রাত দিন পরিশ্রম করে হন্যে হয়ে ঘুরছে, এই মহামারী কোভিড-১৯ এর ঔষধ আবিষ্কারের জন্য। সবাই যখন খুব হতাশ আর দুশ্চিন্তার মধ্যে দিনাতিপাত করছেন, কি হয়, কোথায় কিভাবে এই মহামারী কি রূপ নেবে। পরবর্তী বিশ্বে কত মানুষ মারা যাবে, ক্ষুধা-দারিদ্র্য, অর্থনৈতিক মন্দা, মহামন্দা, সামনে আরো কত কি দেখবে এই বিশ্ব।
এই দুশ্চিন্তায় মানুষ যখন অস্থির দিশেহারা। ঠিক তখনই ঘনঘটা কালো মেঘের আড়ালে উঁকি দেয় এক চিলতে সূর্যের হাসি। মানুষ আশায় বুক বাঁধতে শুরু করে। যুক্তরাষ্ট্রের দ্য ফুড অ্যান্ড ড্রাগ অ্যাডমিনিস্ট্রেশন মহামারী করোনা ভাইরাস কোভিড-১৯, চিকিৎসায় জরুরি ওষুধ হিসেবে ব্যবহারের অনুমোদন দেয় ‘রেমডেসিভির’ নামক ঔষধের। যা চলতি সপ্তাহে কোভিড-১৯, চিকিৎসার জন্য মার্কিন সরকারের কাছে হস্তান্তর করা হবে। পর্যায় ক্রমে বিভিন্ন হাসপাতালে সরবরাহ করা হবে এই ঔষধ।
মার্কিন ওষুধ তৈরির প্রতিষ্ঠান গিলিয়েড সাইন্সের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) ড্যানিয়েল ও’ডে গত রোববার এ কথা নিশ্চিত করে বলেছেন, তারা বিনা মূল্যে প্রায় ১৫ লাখ ঔষধ সরকারকে অনুদান হিসেবে প্রদান করবে। হাসপাতালে কোন কোন রোগীদের অবস্থা আশঙ্কা জনক এবং যেসব রোগীদের মৃত্যু ঝুঁকি বেশি রয়েছে, তাদেরকে জরুরী ভিত্তিতে এই ঔষধ প্রয়োগ করা হবে।
এদিকে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেছেন, চলতি বছরের শেষে করোনা ভাইরাসের টিকা পেয়ে যাবে যুক্তরাষ্ট্র।
‘রেমডেসিভির’ এই ঔষধ ইনজেকশনের মাধ্যমে রোগীর শরীরে প্রবেশ করা হয়। এটি মূলতঃ ইবোলা চিকিৎসায় তৈরি ও ব্যবহৃত আপডেট ঔষধ। মার্কিন পরীক্ষায় প্রাথমিক ফলাফলে দেখা গেছে, ‘রেমডেসিভির’ প্রয়োগে সেরে উঠার সময় ১৫ দিন থেকে কমে ১১ দিনে নেমে এসেছে।
যুক্তরাষ্ট্রের শীর্ষ সংক্রামক রোগ বিশেষজ্ঞ ও আমেরিকার ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব এলার্জি এন্ড ইনফেকশন পরিচালক ডিজিজেসের পরিচালক বলেছেন, ‘রেমডেসিভির’ দ্রুত সেরে ওঠার ক্ষেত্রে ইতিবাচক প্রভাব পরিষ্কার।
আশায় বুক বাঁধি! মানব সভ্যতার এই ক্রান্তি কালে এই ঔষধ কার্যকরী ভূমিকা পালন করুক। অবাক বিশ্ব, অসহায় মানুষ অধীর আগ্রহে প্রতীক্ষা করছে, ‘রেমডেসিভির’ কার্যকারিতা ও সফলতা নিয়ে।
যারা ইতিমধ্যেই আমাদের কাছ থেকে চলে গিয়েছেন, তাদেরকে আমরা আর নিশ্চিত ভাবেই ফিরে পাবো না। কিন্তু যারা বেঁচে আছেন, তাদের মনে যে আশার আলো জ্বলে উঠেছে, নিশ্চয়ই সৃষ্টিকর্তা মহান আল্লাহ তায়ালা মানব সভ্যতার এই ক্রান্তি কালে, তাঁর সৃষ্টিকুল রক্ষার্থে, ‘রেমডেসিভির’ কার্যকারী ক্ষমতা বাড়িয়ে দিবেন। এই আশায় শুধুই অপেক্ষা…..
মুহাম্মদ আলমগীর কবির
সাভার
০৫ মে,২০২০ খ্রিস্টাব্দ।